পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে সৌন্দর্যের লীলাভুমি টেকনাফ

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল ◑
প্রাকৃতিক দৃর্শ্যে ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভুমি পর্যটন নগরী টেকনাফ উপজেলা এখন সারাবিশ্বে শ্রেষ্ট পর্যটন নগরী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।কারন টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা পর্যটন স্পট গুলো দেখে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা আনন্দে মুখোরিত হচ্ছে।

এদিকে প্রতি বছরের ন্যয় এবারও দেশী-বিদেশী পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠা পর্যটনকেন্দ্র গুলো। পাশাপাশি আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব সময় প্রস্তুত রয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

টেকনাফে দেখার মত পর্যটন স্পট গুলো হচ্ছে, অমর প্রেম কাহিনী নিয়ে রচিত ঐতিহাসিক মাথিন কূপ, হোয়াইক্যং ইউনিয়নে কুদুম গুহা, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধ্যানঘর, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, সৈকতে গেলে দেখা যাবে সারি সারি
মাছ ধরার ‘চাঁদ নৌকা’ প্রাকৃতিক দৃর্শ্যেঘেরা ন্যাচার পার্ক, নাফনদীতে গড়ে উঠা জইল্যার দ্বীপ, নেটং পাহাড়,নাফ নদীর উপর নির্মিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার বিশাল আকারের ট্রানজিট জেটি, দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন,মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন বাহারছড়া ইউনিয়নে অবস্থিত গর্জনবাগান। এসমস্ত পর্যটন স্পট গুলো বিশ্বের কাছে টেকনাফকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়।

টেকনাফ মডেল থানা কম্পাউন্ড চত্বরে অবস্থিত পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মত ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ। সেখানে গেলে চোঁখে পড়বে বেদনাবিধুর এক অমর প্রেমের কাহিনির সংকলন। রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিন আর এক পুলিশ কর্মকর্তার প্রেম সময়কে জয় করে নিয়েছে প্রেমের বিরহ, অপেক্ষা আর প্রয়াণের কাব্যে।

ঐতিহাসিক প্রেমের এই দুই নর-নারীর আখ্যান আজও মনে নাড়া দিয়ে যায় সবাইকে। অমর প্রেমের সেই নিদর্শন এক নজর দেখার জন্য প্রেমিক যুগল ও দেশী-বিদেশী পর্যটকরা ভিড় জমান।

টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের গেম রিজার্ভের রইক্ষ্যং এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র কুদুম গুহার অবস্থান। এই গুহাটির ভেতরে রয়েছে প্রচুর বাদুড়ের আশ্রয়স্থল। তাই এটিকে বাদুড়গুহাও বলা হয়। কুদুম গুহায় দুই প্রজাতির বাদুড়ের দেখা মিলবে।

এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির শামুক, মাকড়সা এবং যখন পানি ওঠে তখন জলচর জোঁকসহ নানা প্রাণীর দেখা যাবে। পর্যটকরা এখানে প্রাকৃতিক ঝরনায় গোসলের পাশাপাশি বাদুড়ের কিচির মিচির শব্দে আনন্দ উপভোগ করে। এখানকার রোমাঞ্চকর পথ এবং গুহার ভেতরে প্রবেশ করার জন্য অবশ্যই গাইড বা বনবিভাগের প্রহরীর সাহায্য নিতে হবে।

এদিকে প্রায় এক হাজার হেক্টর আয়তনের টেকনাফে অবস্থিত মনোরম দৃর্শ্যেঘেরা বনভুমি বিশাল আকারের ন্যাচার পার্ক। এই পার্কটি ঘিরে টেকনাফের মানুষের স্বপ্ন অসীম। প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের সমারোহে পরিবেষ্টিত ন্যাচার পার্কটি দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হওয়ার স্থান এটি। এখানে বন গবেষণাগার, বিশ্রামাগার, টংঘর, কৃত্রিম পাখির ডাক সম্বলিত ডরমেটরি, বানর, হাতি, পাহাড়ি মোরগ, শুকরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও পাখি দেখতে পাওয়া যাবে। এছাড়া সারি সারি জাম গাছ পর্যটকদের বিমোহিত করে তুলবে।

আর পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় গিয়ে মিয়ানমার ও নাফনদী অবলোকন করা যাবে। এখানে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য রয়েছে পাহারা দল ও গাইড। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত হিসাবে পরিচিত টেকনাফ সমুদ্র সৈকতটি সবচেয়ে বেশী পরিচ্ছন্ন সৈকত এখানে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে।

সাগরের ঢেউয়ের তালে তালে প্রেমিক যুগল, যুবক-যুবতিরা গোসল করে আনন্দে মেতে উঠে।এছাড়া সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় সারিবদ্ধভাবে জেলেদের মাছ ধরার নৌকা।

অনেকে এগুলোকে ‘চাঁদ নৌকা’ বলে অভিহিত করে। লাল,নীল, বেগুনিসহ বিভিন্ন বাহারি রঙের পতাকা দিয়ে জেলেরা তাঁদের নৌকাগুলো সাজিয়ে রেখেছে। যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তুলবে। এছাড়া সৈকতের পাশে একটু দূরেই আছে ঝাউবন। এই ঝাউবনটি প্রেমিক যুগলের জন্য পছন্দনীয় স্থান।

এদিকে টেকনাফ শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দক্ষিনে গভীর বঙ্গোপসাগরের মাঝ খানে বিশ্বের শ্রেষ্টতম দ্বীপ প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল সেখানে মিলেমিশে একাকার, দ্বীপের চারপাশে সমুদ্র সৈকতের তীর ঘেঁষে বাঁধা আছে সারি সারি মাছ ধরার নৌকা, নান্দনিক নারিকেল বাগান,হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ, প্রবালের দেখা মিলবে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। এই দ্বীপটির আয়তন মাত্র ১৭ বর্গ কিলোমিটার। সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে আরো একটি দ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে। যার নাম হচ্ছে ছেড়া দ্বীপ।
এই দ্বীপে যেতে পর্যটকবাহী জাহাজ,স্প্রীট ভোট ও গাছের ট্রলারে উঠতে হয়। যেতে সময় লাগে ২/৩ ঘন্টা।